যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প লবিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ‘বর্বর নির্যাতনের’ অভিযোগ এনেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তার দাবি, দেশটিতে ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন, তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কে ‘কোনো প্রভাব পড়বে না।’
শনিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর এফডিসিতে ‘মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব’ বিষয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘ছায়া সংসদে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিতর্কের বিষয় ছিল, “আগামী মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যটি সম্পূর্ণ ‘ডোমেস্টিক পলিটিক্যাল ইস্যু’। লবিস্টরা হয়ত এ বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে।
বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়নি বলে দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ইউনিটি কাউন্সিল ৯ জন সংখ্যালঘু মারা যাওয়ার বিষয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় এখানে ধর্মীয় বিষয়ের চেয়ে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা অন্য কোনো কারণ ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন বাংলাদেশে হঠাৎ বাড়তি নজর কেড়েছে গত ৩১ অক্টোবর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের এক প্রতিক্রিয়ায়। সেদিন মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স-এ পোস্ট করে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর ‘বর্বর সহিংসতা’ র অভিযোগ আনেন।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। হিন্দু সম্প্রদায় তখন থেকেই ধারাবাহিক বিক্ষোভ চালিয়ে আসছে, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগকে ‘অতিরঞ্জিত’ বলে দাবি করা হয়েছে।
ট্রাম্প যে মন্তব্যই করুন না কেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে যেই জিতুন না কেন, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখছেন না প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, প্রফেসর ইউনূসের (প্রধান উপদেষ্টা) সাথে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিক দুই পার্টিরই সিনিয়র লিডারদের খুব ভালো সম্পর্ক। তার বন্ধু দুটি দলের মধ্যেই আছে।
রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অনেকখানি ‘ব্যক্তিগত অ্যাটাচমেন্টের’ ওপর নির্ভর করে দাবি করে শফিকুল আলম বলেন, ড. ইউনুস একজন গ্লোবাল লিডার। তাই মার্কিন নির্বাচনে কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প যে-ই জয়ী হোক না কেন আমাদের সম্পর্কের কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না।
ভারতের সঙ্গেও সরকারের সম্পর্ক ‘ভালো’ দাবি করে প্রেস সচিব বলেন, আমরা চাচ্ছি তাদের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান হয়েছে তাতে আমরা সারা বিশ্বের সাপোর্ট পেয়েছি। পতিত ‘স্বৈরাচার সরকারের’ সাথে ইন্ডিয়া থাকা সত্ত্বেও তা কোনো কাজে আসেনি। জনগণ জেগে উঠলে কোন ‘অপশক্তিই’ টিকে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছায়া সংসদে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকদের হারিয়ে বিজয়ী হয় স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকরা। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, এ কে এম মাজহারুল ইসলাম, সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হাসিব, আশিকুর রহমান অপু ও আতিকুর রহমান।